আপনি জানেন কি স্মার্টফোন থেকে আপনার তথ্য নিয়ে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কী করছে?
আপনার স্মার্টফোনের জাইরোস্কোপ হয়তো সারাক্ষণ ট্র্যাক করা হচ্ছে। আপনার সব মেসেজ স্ক্যান করা হচ্ছে। আপনার দেয়া তথ্য তুলে দেয়া হচ্ছে তৃতীয় কোন কোম্পানির হাতে।
জেনে বা না জেনে আপনি যখন কোন অ্যাপ ডাউনলোড করছেন বা কোন ওয়েসসাইটে গিয়ে সাইন ইন করছেন, তখন এভাবেই আপনার তথ্য নিয়ে টেক কোম্পানিগুলোর অজানা ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
ভাবুন তো, আপনি আপনার বন্ধুর সাথে এই মুহুর্তে কথা বলছেন- “দোস্ত আগামি মাসে নতুন বাসা নিব, তাই একটু ব্যস্ত আছি”।
কল কাটার সাথে সাথে আপনার ফোনে এস এম এস চলে আসলো- “বাসা পাল্টাতে চান? অমুক কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করুন” ।
অবাক করার মতো হলেও সত্য যে তারা সারাক্ষনই আপনাকে ট্র্যাক করছে, এমনকি আপনি কি কথা বলছেন তাও!
গবেষণায় দেখা গেছে যে, তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানির প্রাইভেসি পলিসি এবং শর্তাবলী এমন ভাষায় লেখা, যা পুরোপুরি বুঝতে দরকার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা। এসব শর্তাবলীর কথামালা ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার তথ্য যে কতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটা দেখে চমকে উঠতে পারেন!
১. আপনাকে অনুসরণ করা হচ্ছে আপনার অনুমতি ছাড়াই
জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের মাধ্যমে আপনার লোকেশন বা অবস্থান সম্পর্কে জানার জন্য অনেক অ্যাপ আপনার অনুমতি চায়। আপনি চাইলে এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। কিন্তু আপনি অনুমতি না দেয়ার পরও কিন্তু অনেক অ্যাপ আপনার অবস্থানের ওপর নজরদারি চালাতে পারে।
যেমন ধরা যাক ফেসবুক। স্মার্টফোনের জিপিএস ছাড়াই কিন্তু এই অ্যাপটি আপনার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। ফেসবুকে আপনি যেসব ‘চেক ইন’দিচ্ছেন, বা যেসব ‘ইভেন্টে’ যোগ দিচ্ছেন, তা থেকে এবং আপনার আইপি এডড্রেস দেখে তারা অনুসরণ করে আপনাকে।
একই কাজ করে টুইটারও। আপনার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তথ্য জানতে চায় তারাও। যদিও এই তথ্য সংগ্রহের জন্য তারা নানা যুক্তি দিয়ে থাকে।
২. আপনার তথ্য সহযোগী কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করছে
আপনি যখন নির্দিষ্ট কোনও অ্যাপ্লিকেশনের শর্ত মেনে তা ব্যবহার করতে রাজী হন, আপনি কেবল সেই কোম্পানির হাতে আপনার তথ্য তুলে দিচ্ছেন না। তারা এই তথ্য আবার শেয়ার করছে তাদের সহযোগী কোম্পানি বা অ্যাপের সঙ্গে।
যেমন ‘লিংকডিন’-কে যখন ২০১৬ সালে মাইক্রোসফট কিনে নিলো, তখন থেকে এর গোপনীয়তার নীতিতে যুক্ত করা হলো যে মাইক্রোসফটের অন্য পরিসেবা থেকেও তথ্য ব্যবহার করা হবে।
৩. এবং আপনাকে বাধ্য করা হচ্ছে তৃতীয় পক্ষের শর্ত মানতে
‘অ্যামাজন’ বলছে যে, ব্যবহারকারীদের তথ্য তারা তৃতীয় পক্ষ বা থার্ড পার্টির সাথে বিনিময় করতে পারে। কিংবা আপনি যদি ‘অ্যাপল’ এর কোনও পণ্য কিনে থাকেন, সেখানেও একই বিষয় ঘটছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলিতে গত মে মাস হতে একটি নতুন আইন, ‘জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন’ কার্যকর হয়েছে। কিন্তু সেই আইনেও কোম্পানিগুলোকে এসব তৃতীয় পক্ষের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়নি।
তবে প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনালের মতো সংস্থার আইনজীবী আইলিদ কালান্দার উদ্বেগ জানিয়ে বলছেন যে, ‘এর মানে এসব তথ্য ব্যবহার করে তারা জানতে পারছে আপনার অবস্থান, আপনার পছন্দ, আপনার পরিচিত জনের ফোন নম্বর- সবই।’
এভাবে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার আর গোপনীয়তার নীতিমালা লঙ্ঘনের সমালোচনা করে তা বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণের দাবিও জানান তিনি। আবার যেমন ‘উইকিপিডিয়া’ তাদের গ্রাহকদের কোনও তথ্য অন্য কোনও কোম্পানির সাথে শেয়ার করে না।
৪. ‘টিনডার’ জাইরোস্কোপের তথ্যও সংগ্রহ করে
এই তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারটা কেবল আপনার নাম, বয়স বা অবস্থানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না।
‘টিনডার’ বলছে যে তারা আপনার ফোনের অ্যাক্সেলোমিটার (আপনার চলাফেরার তথ্য জানা যায় এটি থেকে), জাইরোস্কোপ (আপনি কোন অ্যাঙ্গেলে ফোন ধরে আছেন, সেই তথ্য জানা যায় এটির মাধ্যমে) এবং কম্পাস থেকেও তথ্য নেয়।
তবে , এসব তথ্য কি কাজে লাগে সেটা তারা বলছে না।
৫. ফেসবুক আপনার মুছে ফেলা সার্চ অপশনের তথ্যও রাখছে
‘ফেসবুক’ ব্যবহারকারীদের সুযোগ রয়েছে তাদের অনুসন্ধানের তথ্য মুছে ফেলার। কিন্তু ফেসবুক সেসব তথ্য তাৎক্ষণিক ভাবে নষ্ট করছে না। অন্তত ছয় মাস ব্যবহারকারীর অনুসন্ধান বিষয়ক তথ্য তারা রেখে দেয়।
৬. অ্যাপস বন্ধ রাখলেও অনুসন্ধান বন্ধ থাকে না
যখন আপনি ‘ফেসবুক’-এ নেই তখন তা আপনার তথ্য অনুসন্ধান করে যেতে পারে। এমনকি ‘ফেসবুক’-এর অ্যাকাউন্ট না থাকলেও।
‘ফেসবুক’এর তথ্য নীতিমালায় তারা তাদের তথ্য নিয়ে কাজ করে থাকে বিজ্ঞাপনদাতা, অ্যাপ ডেভেলপার এবং প্রকাশকদের সাথে। সেই শর্তে ফেসবুক আপনি কোন ওয়েবসাইট দেখছেন বা কি কিনছেন এসব তথ্য তাদের কাছে পাঠাতে পারে।
৭. লিংকডিন আপনার ব্যক্তিগত মেসেজগুলোও স্ক্যান করে
আপনি যদি মনে করে থাকেন যে আপনার ব্যক্তিগত মেসেজগুলো আসলেই ‘ব্যক্তিগত’, তবে আরেকবার ভাবুন।
‘লিংকডিন’ তাদের প্রাইভেসি পলিসি অনুসারে স্বয়ংক্রিয় মেসেজ স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে।
‘টুইটার’ আপনার মেসেজগুলো সংগ্রহ করে।
আপনাকে বোঝার জন্যে এবং আপনার প্রতিরক্ষা দিতে এমনটা তারা করে বলে সাফাই তাদের।
তাছাড়া, মোবাইল সেবাদাতা কোম্পানি গুলোও একই কাজ করছে আপনাকে না জানিয়েই। আপনি কখন, কোথায় যাচ্ছেন এ সবকিছুই তারা ট্র্যাক করছে সব সময়। আপনার মোবাইল নাম্বারসহ গুপনীয় অনেক তথ্য তারা বিক্রি করে দিচ্ছে ৩য় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে।