ইমু(imo) অ্যাপের বিকল্প হিসেবে কেনো টেলিগ্রাম ব্যবহার করবেন জেনে নিন। : All Bangla Tricks
২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
সর্বশেষ সব

ইমু(imo) অ্যাপের বিকল্প হিসেবে কেনো টেলিগ্রাম ব্যবহার করবেন জেনে নিন।

Link Copied!

যদিও বর্তমানে টেলিগ্রাম আগের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয় অনলাইন ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ, তবে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোতে অনেকেই এখনো অনলাইন মেসেজিং অ্যাপ বলতে শুধুমাত্র ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইমো-কেই বুঝে থাকে। আপনি যদি রেগুলার ইমো-ইউজার হয়ে থাকেন, আই অ্যাম সরি, কিন্তু ইমো হচ্ছে আমার দেখা সবথেকে বাজে অনলাইন মেসেজিং অ্যাপ। বর্তমান সময়ে এটা আরও বিরক্তিকর হয়ে গেছে বিভিন্ন আজেবাজে ফিচার এবং অতিরিক্ত এ্যাড শো করার কারনে।

 

যাইহোক, যদি আপনি ইতমধ্যেই টেলিগ্রাম অ্যাপটির ব্যাপারে না শুনে থাকেন, অথবা যদি শুনেছেন কিন্তু কখনো ব্যাবহার করেননি এমন হয়ে থাকে, তাহলে লেখাটি পড়তে থাকুন। ঠিক কি কি কারনে আমি টেলিগ্রামকে অন্যান্য সকল ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপসের তুলনায় বেটার মনে করি এবং টেলিগ্রাম মেসেঞ্জারে এমন কি কি ফিচারস আছে যেগুলো অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপে নেই, সে ব্যাপারেই আজ আলোচনা করতে চলেছি।

টেলিগ্রাম কি?
টেলিগ্রাম মেসেঞ্জার একটি ওপেন-সোর্স মাল্টি-প্লাটফর্ম ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ, যেটি ২০১৩ সালের শেষের দিকে রাশিয়ান উদ্যোক্তা Pavel Durov এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়।

আর বর্তমানে এটির বিশ্বব্যাপী প্রায় ২০০ মিলিয়নেরও বেশি অ্যাক্টিভ ইউজার রয়েছে। মুলত যখনই টেলিগ্রামের প্রতিযোগী কোন অ্যাপের ডাটা ব্রিচ স্ক্যান্ডাল ঘটে, তখনই টেলিগ্রামের ইউজার হুহু করে বাড়তে থাকে এর প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি ফিচারসের কারণে। যাইহোক, এবার আলোচনা করা যাক টেলিগ্রাম মেসেঞ্জারের কিছু ফিচারস নিয়ে যেগুলো সচরাচর অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপে দেখতে পাবেন না।

ডাটা এনক্রিপশন 
টেলিগ্রাম এ্যাপ সরাসরি ক্লায়েন্ট এনক্রিপশন সার্ভার ব্যবহার করে ক্লাউড ভিত্তিক বার্তা আদান প্রদাণ করে থাকে। সহজ করে বললে একে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে সরাসরি সার্ভার থেকে কিংবা Man-in-the-middle (MITM) এ্যাটাক পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনার পাঠানো বার্তাটি কেউ দেখে নিতে না পারে। আরও একটু সহজ করে বুঝাতে গেলে উদাহরণ হিসেবে বলবো, যারা নিয়মিত সোস্যাল সাইট গুলো ব্যবহার করেন তারা প্রায়ই শুনে থাকবেন যে ওমুক-তমুকের কথপোকথন কেউ তাদের অগোচরেই হ্যাক করে ছড়িয়ে দিয়েছে। এই ক্ষেত্রে ভিক্টিমের ডিভাইস বা একাউন্টের কোন ক্ষতি না করেই তাদের মধ্যকার কথপোকথন চোর(হ্যাকার) চুরি করে বের করে আনে। আর টেলিগ্রাম সেখানেই আপনাকে নিরাপত্তা প্রদাণ করছে। আপনার ডিভাইস থেকে আপনার বন্ধুকে যখন আপনি কোন বার্তা পাঠানোর জন্যে Send বাটনে ক্লিক করছেন তখনই আপনার ঐ বার্তাটি টেলিগ্রাম এ্যাপের একটি গোপন এনক্রিপশন কী (যার তথ্য টেলিগ্রাম কম্পানি নিজেও জানে না) এর মাধ্যমে বার্তাটিকে এনক্রিপ্ট (নিরাপত্তা বিষয়ক একটি ব্যাপার) করে তারপর সেটি প্রাপকের কাছে পৌছে দিচ্ছে। এখন এর মাঝে বসে যদি কেউ আপনার পাঠানো বার্তাটি পড়তেও যায় তাহলে সে ঐ নির্দিষ্ট ‘এনক্রিপশন কী’ জানা না থাকবার কারণে বার্তাটি সরাসরি পড়তে বা বুঝতে ব্যার্থ হবে। কারণ হিসেবে বললে বলতে হবে, ঐ অবস্থায় মেসেজটি দেখতে কিছুটা হিজিবিজি কিছু অক্ষর ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না।
যেমন আপনি মেসেজে লিখলেন – Hi there!
আর এনক্রিপশনের পর মেসেজটি খুঁজে পেলে দেখা হবে সেখানে লেখা রয়েছে – LQCIGFOG8VxNPW1qapkFWLpz
এখন এই ‘LQCIGFOG8VxNPW1qapkFWLpz’ এর মাঝে কি লেখা রয়েছে তা কেবল আপনার টেলিগ্রাম একাউন্টের সাথে গোপন চাবি হিসেবে যুক্ত ‘এনক্রিপশন কী’ এর সহায়তা নিয়েই পড়া যাবে, নচেৎ এই অক্ষরের আড়ালে লুকায়িত বার্তা উদ্ধার করতে বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
আবার আপনি যদি চান আপনার আর আপনার বন্ধুর মধ্যকার কথপোকথন আপনি তাদের সার্ভারেও জমা রাখবেন না, তাহলে খুব সহজেই টেলিগ্রাম এ্যাপের ‘Secret Chat’ ফিচার ব্যবহার করে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা সেড়ে নিতে পারেন। এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র আপনার আর আপনার বন্ধুর ডিভাইস ছাড়া এই মেসেজ আর কোথাও সংরক্ষন করা হবে না। আর যখনই আপনারা আপনাদের ঐ Secret Chat সেশন শেষ করবেন তখনই ঐসব মেসেজ আপনাদের ডিভাইস থেকেও চিরতরে মুছে যাবে। আরও রয়েছে মেসেজকে ‘Self-destruct’ করার সুবিধা। প্রয়োজনে আপনার বার্তা পড়ার সময় আপনি নির্ধারণ করে দিতে পারেন। বার্তা পাঠানোর পর নির্ধারিত ঐ সময়ের পর নিজে নিজেই সেটি সব জায়গা থেকে নিজেকে মুছে ফেলবে।

মেসেজ এডিটিং
এটি আমার মতে যেকোনো মেসেজিং অ্যাপেই থাকা উচিৎ, তবে আমি টেলিগ্রাম ছাড়া আর কোনো মেসেজিং অ্যাপে এখন পর্যন্ত এই ফিচারটি দেখিনি। আপনি যেকাউকে সেন্ড করা যেকোনো মেসেজ সেন্ড করার পরেও এডিট করতে পারবেন। যার ফলে টেলিগ্রামে টাইপো হওয়ার পরে তা আবার রিসিভারকে (*) মার্ক দিয়ে জানিয়ে দেওয়ার দরকার পড়েনা।

আপনার সেন্ড করা কোনো মেসেজে কোনো ধরনের ভুল থাকলে আপনি সহজেই সেন্ড করার পরে মেসেজটি আবার এডিট করে সংশোধন করে দিতে পারবেন এবং সংশোধিত মেসেজটিই রিসিভারের চ্যাট স্ক্রিনে শো করবে। এটি খুবই আন্ডাররেটেড তবে আমার মতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার। আর এছাড়াও ফেসবুক মেসেঞ্জারের মতো সেন্ড করা মেসেজ আবার আনসেন্ড করার অপশন তো আছেই।

লাস্ট সিন সমস্যায় পড়তে হবে না
আপনি অবশ্যই বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাচ্ছি। আমরা অনেকসময় চাই যে আমরা কখন মেসেঞ্জারে বা হোয়াটসঅ্যাপে অ্যাক্টিভ আছি তা আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে হাইড করে রাখতে, তা যে কারণেই হোক না কেন। তবে অধিকাংশ মেসেজিং অ্যাপেই এই ফিচারটি নেই।

তবে টেলিগ্রাম একটি প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি ফোকাসড অ্যাপ হওয়ায়, এখানে আপনি আপনার অ্যাক্টিভ স্ট্যাটাস, অর্থাৎ আপনি কখন অনলাইন আছেন আর কখন অফলাইন, তা নিজের ইচ্ছামত হাইড করে রাখতে পারবেন। আবার চাইলে আপনার সিলেক্ট করা স্পেসিফিক কয়েকজনের থেকেও আপনার অনলাইন স্ট্যাটাস হাইড করে রাখতে পারবেন।

প্রত্যেকটি মেজর প্লাটফর্মের জন্য ন্যাটিভ অ্যাপস
টেলিগ্রামের সবথেকে ভালো ব্যাপারটা হয়তো এটাই। উইন্ডোজ, অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস থেকে শুরু করে লিনাক্স এবং ব্রাউজারের জন্যও টেলিগ্রামের ন্যাটিভ অ্যাপস রয়েছে। আপনি হয়তো বলবেন যে, উইন্ডোজ অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারেরও আছে, তবে হোয়াটসঅ্যাপের উইন্ডোজ এবং ম্যাক ভার্সনটি শুধুমাত্র একটি ওয়েব অ্যাপ, যেটি শুধুমাত্র হোয়াটসঅ্যাপের ওয়েব ইন্টারফেসটি ওপেন করে।

তবে টেলিগ্রামের উইন্ডোজ এবং ম্যাকওসের অ্যাপটি কোনো PWA নয়, বরং ন্যাটিভ অ্যাপ এবং প্রত্যেকটি প্লাটফর্মের টেলিগ্রাম অ্যাপই প্রায় ২-৩ দিন পরপরই আপডেট করা হয়। তাই টেলিগ্রামের কোনো প্লাটফর্মের কোন অ্যাপই মান্ধাতা আমলের ইউজার ইন্টারফেসে পড়ে থাকে না। এছাড়া টেলিগ্রামের প্রত্যেকটি প্লাটফর্মের অ্যাপই স্ট্যান্ডঅ্যালোন অ্যাপ। অর্থাৎ, অ্যাপটি ব্যাবহার করার জন্য হোয়াটসঅ্যাপের মতো সারাক্ষন স্মার্টফোন কানেক্টেড রাখার দরকার পড়েনা।

শুধু তাই নয়, টেলিগ্রাম একটি ওপেনসোর্স প্লাটফর্ম হওয়ায় যেকোনো ডেভেলপার টেলিগ্রামের জন্য থার্ড পার্টি অ্যাপস ডেভেলপ করতে পারেন এবং উইন্ডোজ এবং অ্যান্ড্রয়েডে আপনি শুধুমাত্র টেলিগ্রামের অফিসিয়াল অ্যাপসই নয়, আরও অনেক থার্ড পার্টি টেলিগ্রাম অ্যাপস খুঁজে পাবেন যেগুলোতে আরও অনেক এক্সট্রা ফিচারস থাকতে পারে। ওপেনসোর্স হওয়ায় অ্যাপটিকে কাস্টোমাইজ করার কোন লিমিট নেই!

আরও একটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে এটি একই সাথে আপনার সকল ডিভাইসে মেসেজ সিনক্রোনাইজ করতে থাকে। ধরুন আপনার একটি এন্ড্রয়েড ফোন, একটি আইফোন, একটি ট্যাব আর একটি পিসি রয়েছে। আপনি পিসি থেকে কোন বার্তা কাউকে পাঠালে কিংবা কারও কাছে থেকে আপনি কোন বার্তা পেলে সেটি একই সাথে সকল ডিভাইসেই আপডেট হয়ে যাবে। আবশ্য সে ক্ষেত্রে আপনার সবগুলো ডিভাইসই ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে।

এছাড়াও আপনি আপনার বন্ধুর সাথে এ যাবৎকালে যত মেসেজ পাঠিয়েছেন কিংবা যত ছবি শেয়ার করেছেন অথবা যত ফাইল আদান প্রদাণ করেছেন তার পুরোটাই আপনি যে কোন সময় যে কোন ডিভাইস থেকে এক্সেস করতে পারবেন।
নাম্বার শেয়ার করার ঝামেলা নেই।

ভাইবার কিংবা হয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে কারও সাথে যোগাযোগ করতে গেলে আপনার ফোন নম্বরটি সরাসরি এক্সপোজ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে কেউ আপনার ফোন নম্বরটির অপব্যবহার করার সুযোগ পেয়ে থাকে। টেলিগ্রামে আপনি আপনার নম্বরটি কাউকে না জানিয়েও টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবেন। আপনি যখন টেলিগ্রামে আপনার username টি সেট করে নিবেন তারপর থেকে যাদের মোবাইলে আপনার ফোন নম্বরটি সরাসরি সংরক্ষণ করা নেই তারা ব্যতিত ভিন্ন কেউ আপনার নম্বরটি আর দেখতে পাবে না।

ইউজার ইন্টারফেস এবং কাস্টমাইজেশন
টেলিগ্রাম মেসেঞ্জারের ব্যাপারে বলতে হলে এর মিনিমাল এবং ক্লিন ইউজার ইন্টারফেসের ব্যাপারে বলতেই হয়। আপনি যেকোনো প্লাটফর্মে যত ধরনেরই ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ দেখবেন, টেলিগ্রামের মতো সিম্পল, মিনিমাল এবং ইজি-টু-ন্যাভিগেট ইউজার ইন্টারফেসের মেসেঞ্জার আপনি খুব বেশি পাবেন না। এছাড়া অন্যান্য অধিকাংশ মেসেঞ্জার অ্যাপের মতো টেলিগ্রামের অ্যাপটি এত রিসোর্স হাংরি নয়। অনেক লো এন্ড ডিভাইসেও টেলিগ্রাম অ্যাপ খুব ভালোভাবেই কাজ করে।

টেলিগ্রামের ইউজার ইন্টারফেস সুন্দর, শুধু তাই নয়, আপনি টেলিগ্রামের সকল প্লাটফর্মের অ্যাপকে নিজের ইচ্ছামত সাজিয়ে নিতে পারবেন, ঠিক যেমনটা আপনি চাইবেন। এই ফিচারটি খুব সম্ভবত আর কোনো মেজর মেসেজিং অ্যাপে আপনি পাবেন না। টেলিগ্রাম অ্যাপে আপনাকে শুধুমাত্র ডার্ক মোড এবং লাইট মোডের অপশনই দেওয়া হয় তা না, বরং আপনি থিমের পাশাপাশি অ্যাপের প্রত্যেকটি এলিমেন্টের কালার অ্যাক্সেন্টও নিজের ইচ্ছামত চেঞ্জ করে নিতে পারবেন।

শুধুমাত্র প্রিসেটই নয়, আপনি নিজের ইচ্ছামত কাস্টম কালার কোডস ব্যাবহার করে আপনার নিজের ইচ্ছামত সাজাতে পারবেন অ্যাপটিকে। এমনকি আপনি যেকোনো প্লাটফর্মে অ্যাপের ইমোজি স্টাইলও চেঞ্জ করতে পারবেন। পাবেন ৪ ধরনের আলাদা আলাদা ইমোজি স্টাইল। টেলিগ্রাম অ্যাপের ইউজার ইন্টারফেস কাস্টোমাইজেশন নিয়ে চাইলে আরও অনেক কিছু লেখা যাবে, যেগুলো আপনি অ্যাপটি ব্যাবহার করা শুরু করলে নিজেই জানতে পারবেন।

২ জিবি পর্যন্ত ফাইল শেয়ারিং
টেলিগ্রামের সবথেকে ভালো ফিচারট হচ্ছে এর আনলিমিটেড ফাইল স্টোরেজ। হ্যা, টেলিগ্রাম মেসেঞ্জারকে চাইলে আপনি একটি ভালো ফাইল শেয়ারিং টুল হিসেবেও ব্যাবহার করতে পারবেন। কারণ, টেলিগ্রামের সবকিছুই ক্লাউড বেজড। হোয়াটসঅ্যাপের মতো সকল চ্যাট হিস্টরি আপনাকে লোকালি ডিভাইসে ব্যাকআপ করে রাখতে হয়না। তাছাড়া টেলিগ্রামে আপনি সর্বোচ্চ ২ জিবি পর্যন্ত যেকোনো ফাইল আপলোড করতে পারবেন এবং সেন্ড করতে পারবেন।

একটি ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপের ক্ষেত্রে ২ জিবি ফাইল সাইজ লিমিট সত্যিই অনেক বেশি, যেখানে ফেসবুকের মতো প্লাটফর্মে আপনি ২৫ এমবির বেশি সাইজের ফাইল আপলোড করতে পারবেন না। তাই টেলিগ্রামের সাহায্যে চাইলে আপনি এইচডি কোয়ালিটির একটি ভিডিও যেকারো সাথে শেয়ার করতে পারবেন। তাছাড়া, টেলিগ্রামে আপলোড করা কোনো ফাইল আপলোড/ডাউনলোডের সময় আপনার ইন্টারনেট স্পিড থ্রটল করা হয়না। এর ফলে আপনি সবসময়ই ফাইল ডাউনলোড এবং শেয়ার করার সময় আপনার নেটওয়ার্কে সর্বোচ্চ স্পিড পাবেন।

এছাড়াও, টেলিগ্রামে শেয়ার করা আপনার সকল ফাইল সবসময়ের জন্য টেলিগ্রামের সার্ভারে থেকে যাবে, যদি আপনি এবং রিসিভার দুজনেই ফাইলটি ডিলিট না করে দেন। এর ফলে আপনার সেন্ড করা যেকোনো ফাইল আপনি যেকোনো সময় যেকোনো ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। অর্থাৎ, একদিক থেকে ভেবে দেখলে এটি এক প্রকার আনলিমিটেড ক্লাউড স্টোরেজের মতোও কাজ করে।

স্পিড এবং রিলায়েবলিটি
আপনি যদি কখনো টেলিগ্রাম মেসেঞ্জার ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই এর টেক্সট ডেলিভারি স্পিড লক্ষ্য করে থাকবেন। টেলিগ্রাম মেসেঞ্জার আমাদের দেখা এই পর্যন্ত সবথেকে ফাস্ট চ্যাটিং অ্যাপ। মুলত আমি যখন ইন্টারনেট স্পিডের সমস্যার কারণে অন্য কোন মেসেঞ্জার ভালোভাবে ব্যাবহার করতে পারি না, তখন টেলিগ্রাম সবসময়ই অন্যান্য অ্যাপের তুলনায় দ্রুত কাজ করে।

ওয়াইফাই, ফোরজি, থ্রিজি, টুজি সবধরনের নেটওয়ার্কেই টেলিগ্রামের মেসেজ ডেলিভারি স্পিড অন্যান্য মেজর সব চ্যাটিং অ্যাপসের তুলনায় অনেক দ্রুত। এছাড়া টেলিগ্রাম মেসেঞ্জারের সাহায্যে করা VoIP অডিও কলের ভয়েস কোয়ালিটি এবং লেটেন্সিও অনেক ভালো। তবে ভয়েস কলিং এর ক্ষেত্রে আমার মতে টেলিগ্রামের তুলনায় গুগল ডুয়ো কিছুটা বেটার। তবে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারের তুলনায় নিঃসন্দেহে টেলিগ্রামের ভয়েস কোয়ালিটি এবং লেটেন্সি অনেক ভালো।

টেলিগ্রাম গ্রুপস ও চ্যানেলস
গ্রুপ চ্যাটিং সুবিধা শুধু টেলিগ্রাম নয়, অন্যান্য সব মেজর চ্যাটিং প্লাটফর্মেই এই সুবিধা অনেক আগে থেকেই আছে। তবে টেলিগ্রাম গ্রুপে আপনি বেশ কিছু এক্সট্রা ফিচারস অ্যাড করতে পারবেন যেগুলো অন্যান্য প্লাটফর্মে পাবেন না। যেমন- ইউজার ভেরিফিকেশন, পাবলিক নোটস এবং গ্রুপে বট অ্যাড করে বিভিন্ন টাস্ক অটোমেশন করার সুবিধা। একটি পাবলিক চ্যাটিং গ্রুপের জন্য এটি খুবই উপযোগী একটি ফিচার, যা সব প্লাটফর্মেই থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।

এছাড়া টেলিগ্রামে নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা চ্যানেল তৈরী করারও সুবিধা আছে যেখানে কোন একটি স্পেসিফিক টপিকের ওপরে যেকোনো ধরনের আপডেট এবং ইনফরমেশন পাওয়া যায়। উদাহরনসরূপ, টেলিগ্রামে আপনি প্রায় সবকিছুর জন্যই আলাদা আলাদা চ্যানেল খুঁজে পাবেন যেখানে বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট প্রতিনিয়ত শেয়ার করা হচ্ছে। যেমন-বিভিন্ন সফটওয়ারের ক্র্যাক ভার্সন, প্রিমিয়াম অ্যাপের মড ভার্সন ইত্যাদি।
আর যদি এই কথাটুকু না বোঝেন, সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয় না। যে আপনার একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকা প্রয়োজন।

এবার আসি এই টেলিগ্রাম চ্যানেলটি কিভাবে কাজ করে?
উত্তর: ধরুন আপনি একজন ইউটিউবার। আপনি নিশ্চয়ই ভিডিও আপলোড করেন। আর যখনই আপনি ভিডিও আপলোড করেন, ঠিক তখনই কিন্তু আপনার সাবস্ক্রাইবারদের কাছে একটি নোটিফিকেশন চলে যায়। আর এটার কারণ হচ্ছে: তারা আপনার চ্যানেল টি সাবস্ক্রাইব করার পর, পাশে থাকা বেল আইকনে ক্লিক করছিল। কিন্তু এই টেলিগ্রামের একটি বড় সুবিধা রয়েছে সেটা হচ্ছে: শুধু সাবস্ক্রাইব করলেই হবে, পাশের বেল আইকনে ক্লিক করা লাগে না অর্থাৎ কোন ধরনের বেল আইকন নেই টেলিগ্রামের চ্যানেলে। আশা করছি এই বিষয়টি একদম আপনারা ক্লিয়ারলি বুঝতে পারছেন।

আপনি যখন আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেল টি তে কোন কিছু টিউন করবেন। তখন নিচে দেখবেন একটি সংখ্যা কাউন্ট হচ্ছে অর্থাৎ আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেল এ কত জন মানুষ এসে আপনার কাঙ্খিত ভিডিওটি দেখল। সেটি আপনি কাউন্ট দেখেই বুঝতে পারবেন।

এখন আসি এই পদ্ধতিটি কতটুকু কার্যকরী?
উত্তর: আমি মনে করি, সঠিক উপায়ে যদি আমরা আমাদের চ্যানেলের ভিউ বাড়াতে চাই। সে ক্ষেত্রে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল ই যথেষ্ট। ভাই এর চাক্ষুষ প্রমাণ আমি নিজেই।

কিভাবে আপনার টেলিগ্রাম এপ এর ভেতর থেকে একটি চ্যানেল তৈরি করবেন? একদম সোজা ভাই। আপনারা ফেসবুক মেসেঞ্জারে যেভাবে একটি গ্রুপ তৈরি করেন। ঠিক এই ভাবেই তৈরি করা যায় একটি চ্যানেল।

১) এক এর ভিতর থেকে থ্রিডি লাইনে ক্লিক করুন

২) New Channel এ ক্লিক করুন।

৩)সিলেক্ট করুন আপনার কাঙ্খিত চ্যানেলের নাম

৪) (✓) মার্ক এ ক্লিক করুন আর হয়ে যাবে আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেল খোলা।

তবে এখানে আপনি কোন ধরনের মেম্বার এড করতে পারবেন না। শুধুমাত্র চ্যানেল তৈরি করতে পারবেন। তারপরে আপনাকে কষ্ট করে পাবলিসিটি করতে হবে আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেলটিতে সাবস্ক্রাইব করার জন্য।

টেলিগ্রাম বটস
এবার আলোচনা করা যাক আমার সবথেকে প্রিয় টেলিগ্রাম ফিচারের ব্যাপারে। টেলিগ্রাম মেসেঞ্জারের আরেকটি ফিচার হচ্ছে বট ইউজ করার সুবিধা, যা অন্যান্য অধিকাংশ মেজর চ্যাটিং প্লাটফর্মে আপনি পাবেন না। ফেসবুক মেসেঞ্জারে বট ফিচারটি থাকলেও, মেসেঞ্জারের বটসগুলো টেলিগ্রামের তুলনায় অনেক লিমিটেড ফাংশনালিটির এবং খুব একটা কাজের নয়। তবে টেলিগ্রামে বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য বটস রয়েছে যেগুলো ব্যাবহার করে আপনি আপনার অনলাইন লাইফকে কিছুটা সহজ করে নিতে পারবেন।

উদাহরণস্বরূপ, কোন বট আপনার পার্সোনাল টাস্ক রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করবে, আবার কোন বট আপনাকে টেলিগ্রামে শেয়ার করা সব ফাইলের ডিরেক্ট ডাউনলোড লিংক জেনারেট করে দেবে। আবার আপনি এমন অনেক টেলিগ্রাম বটও খুঁজে পাবেন যেগুলো ইউটিউব ভিডিও ডাউনলোডার হিসেবে কাজ করবে। আবার কোন বটকে আপনি ফাইল কনভার্টার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এমন হাজারো ধরনের কাজ আরও সহজভাবে করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট টেলিগ্রাম বটস বা টুলস আছে যেগুলো সত্যিই অনেক কাজের।

অবশেষে টেলিগ্রাম অ‌্যাপে চালু হলো ওয়ান-টু-ওয়ান ভিডিও কল সুবিধা
অ‌্যান্ড্রয়েড এবং আইওএসে আলফা সংস্করণে সেবাটি চালু করা হয়েছে। খবর এনগ‌্যাজেট। চলতি বছরের প্রথমদিকে করোনাভাইসের কারণে লকডাউনের প্রাথমিকধাপে গ্রুপ ভিডিও কল সুবিধা চালুর প্রতিশ্রুতি দেয় নিরাপদ মেসেজিং অ‌্যাপটি। তবে এখনও গ্রুপ ভিডিও কল চালু হয়নি। ব‌্যবহারকারীরা কোনো কনট‌্যাক্টের প্রোফাইল পেইজ থেকে কল দিতে পারবেন। যেকোনো সময় অডিও থেকে ভিডিও কিংবা ভিডিও থেকে অডিওতে ফিরে যাওয়া যাবে। থাকছে পিকচার-ইন-পিকচার সুবিধা, যার ফলে কথা বলার সময়েই অন‌্যদের মেসেজ পড়া এবং উত্তর দেয়া যাবে।টেলিগ্রাম জানিয়েছে, অডিও কল এবং টেক্সট চ‌্যাটের মতোই ভিডিও কল সেবাও এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।শনিবার টেলিগ্রাম এক বিবৃতিতে বলেছে, “২০২০-এ ভিডিও কল, অনেকটাই ২০১৩ সালের মেসেজিংয়ের মতো। এমন অনেক অ্যাপ রয়েছে যা হয় নিরাপদ আর নয়তো ব্যবহারযোগ্য, কিন্তু এই দুটিকে একত্রে পাওয়া যায় না”।

টেলিগ্রামের ভিডিও কল সেবায় কী কী সুবিধা থাকবে তা সুনির্দিষ্ট করে জানায়নি প্রতিষ্ঠানটি। তবে, গোপনতা প্রশ্নে অ্যাপটি যে মনোযোগ পাচ্ছে সে প্রতিশ্রুতি তারা আগেভাগেই দিয়ে রেখেছে। উল্লেখ্য, নিরাপত্তার প্রশ্নে টেলিগ্রামের মেসেজিং সেবা প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে বেশ সুপরিচিত। শুরু থেকেই ব্যবহারকারীদের এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনে সেবা দিয়ে আসছে অ্যাপটি।
টেলিগ্রামের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বে টেলিগ্রাম অ্যাপ ব্যবহারকারী সংখ্যা ৪০ কোটিরও বেশি।
“টেলিগ্রামের মাসিক ব্যবহারকারী সংখ্যা ৪০ কোটিতে পৌঁছেছে, গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩০ কোটি। প্রতিদিন অন্তত ১৫ লাখ নতুন ব্যবহারকারী টেলিগ্রামের সেবা পেতে সাইন আপ করছেন। ফোল্ডার, ক্লাউড স্টোরেজ এবং ডেস্কটপ সমর্থনের মতো ফিচারগুলো টেলিগ্রামকে কোয়ারেন্টিনের সময়ে দূর থেকে বসে করা কাজের জন্য এবং শিক্ষার কাজে ব্যবহারের জন্য উপযোগী করে তুলেছে”। – বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

গত মাসেই ‘ডিসকাশন বাটন’ নামের নতুন একটি বাটনও নিয়ে এসেছে টেলিগ্রাম। ওই বাটনের সহায়তায় ভিন্ন গ্রুপ চ্যাট বা সীমিত করে রাখা চ্যানেলের চ্যাটিংয়ে অংশ নিতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।

টেলিগ্রাম ডাউনলোড
শুধু এগুলোই নয়, টেলিগ্রাম মেসেঞ্জারে আরো অনেক এমন ফিচারস আছে, যেগুলো আপনি শুধুমাত্র মেসেঞ্জারটি ব্যাবহার করা শুরু করলেই জানতে পারবেন এবং ভাববেন, এই ফিচারগুলো ফেসবুক মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসঅ্যাপে থাকলে কত ভালো হত! একইসাথে একটি ফাংশনাল চ্যাটিং এবং ফাইল শেয়ারিং অ্যাপ হিসবে টেলিগ্রামের মতো আর একটাও প্লাটফর্ম আপনি খুঁজে পাবেন না।
এবার সংক্ষেপে টেলিগ্রামের সুবিধা-অসুবিধাগুলো দেখে নেয়া যাক

সুবিধা
*অত্যন্ত ফাস্ট মেসেজ ডেলিভারি
*২জি এবং ৩জি নেটওয়ার্কেও ভালোভাবে কাজ করে
*২ জিবি পর্যন্ত ফাইল শেয়ার করার সুবিধা
*আনলিমিটেড ফাইল স্টোরেজ
*সবথেকে ভালো না হলেও, যথেষ্ট ভালো ইউজার ইন্টারফেস
*ক্রস প্লাটফর্ম সুবিধা
*প্রত্যেকটি মেজর প্লাটফর্মের জন্য ন্যাটিভ অ্যাপস
*অ্যাডভান্সড চ্যানেল ও গ্রুপ ম্যানেজমেন্ট ফিচারস
*বট ব্যাবহার করার সুবিধা
*ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার

অসুবিধা
*রিসিভ করা ফাইলের ডিফল্ট ডেস্টিনেশন ফোল্ডার খুঁজে পাওয়া কষ্টকর
*এইমাত্র সেন্ড করা টেক্সট এডিট করা গেলেও, অনেক আগে সেন্ড করা কোন টেক্সট ডিলিট বা এডিট করা যায়না
*ভয়েস কলিং কোয়ালিটি ভালো হলেও এর থেকে বেটার ভয়েস কোয়ালিটির VoIP কলিং অ্যাপস রয়েছে (যেমন- ডিসকর্ড, গুগল ডুয়ো)।

*বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহীত, ঈষৎ পরিমার্জিত এবং পরিবর্ধিত

আপনার যদি আরো কোনো তথ্য জানার থাকে তাহলে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি ভিজিট করুন এবং যেকোনো ভিডিওর নিচে কমেন্ট করুন। চ্যানেল লিংক:  ক্লিক করুন 
error: Content is protected !!