সামান্য সচেতনতা অবলম্বন করলে শুধু মাত্র বিদ্যুৎ বিলের কাগজ থেকেই ভুতুড়ে বিল,বেশি বিল ইত্যাদি সমস্যা সমধান/সমাধানের রাস্তা বের করা সম্ভব।
১।১ নং ছবিতে ১নং মার্ক করা যায়গায় গ্রাহক কোন অফিসের আওতায় সেটা লেখা থাকে।সাধারনত সদর দপ্তর,জোনাল,সাব-জোনাল অফিসে বিভাজন করে সেবা দেওয়া হয়।
– বিলের অপর পৃষ্টায় সংশ্লিষ্ট অফিস প্রধান/ এজিএম এর নাম্বার দেওয়া থাকে। যে কোন অভিযোগ এই নাম্বারে কল দিয়ে গ্ৰাহক জানাতে পারেন।
২।২ নং জায়গাটা গ্রাহকের হিসাব নাম্বার যা দিয়ে গ্রাহককে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করা হয়।মোবাইলে অভিযোগ দিলেই এই হিসাব নাম্বারটা জানতে চাইবে।
৩।৩ নং মার্ক করা ডিজিট গুলো এসমএস হিসাব নাম্বার যা দিয়ে গ্রাহক ঘরে বসেই বিকাশ,রকেট,জি-পে,রবি,ইউ ক্যাশ,মাই ক্যাশ-এ বিল দিতে পারবেন।
৪। ৪ নং ডিজিট গুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন।ভুতুড়ে বিল সংক্রান্ত সমস্যা এই যায়গা ঘিরেই।
প্রতি মাসে নির্দিষ্ট একটা সময়ে মিটার থেকে সর্বশেষ রিডিং গ্রহন করা হয়।এই রিডিং থেকে পূর্ববর্তী মাসের গ্রহনকৃত রিডিং বাদ দিয়ে চলতি বিল করা হয়।
ধরেন গত জুলাই ২৮ তারিখ মিটার রিডিং ছিল ৫০০০ khw ।
আগস্ট এর ২৯ তারিখ গিয়ে মিটারে রিডিং দেখলেন ৫৫০০ kwh । তাহলে জুলাই ২৮ থেকে আগস্ট ২৯ তারিখ পর্যন্ত একজন গ্রাহকের বিল হবে ৫৫০০-৫০০০= ৫০০ kw এর।
কিন্তু বিলের কাগজে লেখা ৬৫০০ তাহলে বুঝতে হবে ১০০০ kw এর বিল বেশি/অগ্রিম করা হয়েছে। তৎক্ষনাত বিলের অপর পৃষ্ঠায় প্রদত্ত নাম্বার নিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসে অভিযোগ দিতে হবে।
আবার বিলের গায় লেখা ৫১০০ তাহলে বুঝতে হবে ৪০০ kw এর বিল কম করা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রেও একজন গ্রাহককে দ্রুত অভিযোগ জানাতে হবে।
অন্যথায় পরবর্তি মাসের ব্যবহারের সাথে কম বিল করা ইউনিট (৪০০ kw) যোগ হয়ে এক কালীন বড় একটা বিল হয়ে যাবে।
তখন বিলের স্লাব রেটও ৫-৬ টাকা থেকে ৯ – ১১.৪৫ টাকা হয়ে ৩গুন এর মতও হয়ে যেতে পারে।সবি ঠিক আছে কিন্তু পূর্বের জমানো ইউনিট যোগ হয়ে স্লাব রেট চেন্জ হয়ে আপনাকে বেশী টাকা দিতে হবে।
যেহেতু মিটারে রিডিং সঠিক আছে তাই অভিযোগ করেও সমাধান দেওয়া সম্ভব হয়না।
এক কথায় বিল বেশি হলে যেমন খতিয়ে দেখতে হবে একই ভাবে বিল কম আসলেও খতিয়ে দেখতে হবে। তাই কম,বেশি, সমান যেটাই আসুক বিল পাওয়ার সাথে সাথে মিটারের রিডিং এর সাথে বিলের রিডিং অবশ্যই প্রতি মাসে মিলিয়ে দেখতেই হবে।এটা বিলের পেছনে কাগজে স্পষ্ট বলাও থাকে ।
প্রয়োজনে মোবাইলে ছবি তুলে বা ভিডিও করে সরাসরি অফিসে যেতে পারেন।এতে সাথে সাথে সমাধান দেওয়া সম্ভব।অন্যথায় তদন্ত করে সমাধান পেতে দুই একদিন লাগতে পারে।
প্রতি মাসে রিডিং এর ছবি তুলে রেখে মোবাইলে সংরক্ষনও করতে পারেন।
মিটার রিডিং চেনার নমুনা ২নং ছবিতে দেওয়া আছে।kwh লেখা ডিজিটগুলোই বর্তমান রিডিং।
৫। ৫নং মার্ক করা যায়গাটাও গুরুত্বপূর্ন। বকেয়া বিল এখানে যোগ করা থাকে।অনেক সময় বিল পরিশোধ করা সত্ত্বেও বকেয়া টাকা যোগ হয়ে যায়।
প্রতি মাসে নির্দিষ্ট তারিখ একজন গ্রাহকের বিল প্রিন্ট হয়ে যায়।ধরেন বিল পরিশোধের শেষ তারিখ ২৮ তারিখ। তাহলে বিল প্রিন্ট হবে ২৯ তারিখ। বিগত বিলটি ২৯ তারিখের পর পরিশোধ করলে পুনরায় বিলটি নতুন বিল উঠে যাবে।অনেক সময় গ্রাহক উঠে যাওয়া বকেয়া খেয়াল করেনা।ধরে নেয় পুরোটা এক মাসের বিল।তখন গ্রাহকের কাছে বিলটি বেশি মনে হয়।
যদি কাগজ দেখে বুঝে থাকেন যে পরিশোধিত বিল যোগ করা হয়েছে সে ক্ষেত্রে অফিসে আসলে নতুন বিল করে দেওয়া হয়।
পরিশোধের শেষ তারিখের মধ্যে বিল দিলে এই ঝামেলা হবে না। সব সময় পরিশোধিত তারিখের মধ্যে জরিমানা ছাড়া বিল দিলে উভয় পক্ষের ঝামেলা কম হয়।
কোন বিলে জরিমানা হয়ে গেলে বিলটি পরিশোধ না করে নতুন বিলের জন্য অপেক্ষা করা বেটার।নতুন বিলে অপরিশোধিত বিলটি যোগ হয়ে আসলে এক সাথে দিলেই সমস্যা সমাধান।
৬।১ লা মার্চ ২০২০ থেকে খুচরা বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়েছে।২০০ ইউনিটের যে বিল ১০৫৬ টাকা আসতো সেটা নতুন রেটে ১১১২ টাকা আসবে,৬৬ টাকা বেশি।এভাবে ৩০০ ইউনিটের যে বিলটা পূর্বে ১৬৭১ টাকা আসতো সে বিলটাই নতুন রেটে ১৭৮৪ টাকা আসবে।অর্থ্যাৎ ১১৩ টাকা শুধু মাত্র নতুন রেটের কারনেই বেশি হবে।
এভাবে যত বেশি ব্যবহার করবেন পার্থক্যটাও গত বছরের বিল থেকে বাড়তে থাকবে।
গ্রাহক যত বেশি সচেতন হবে অফিসে সেবা দিতে তত বেশি সহজ হয়।সেবার মানও তত বাড়তে থাকবে।
ধন্যবাদ।