আজ গ্রামের বাড়ীতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ এক বাড়ীতে চিল্লাচিল্লি, কান্নাকাটির আওয়াজ পেলাম। সবাই দৌড়াচ্ছে সেখানে। কি মনে করে আমিও গেলাম। ১৫/১৬ বছরের একটি মেয়ে বিদ্যুৎ শক খেয়েছে। তার পালস, শ্বাস প্রশ্বাস, নড়াচড়া সবই বন্ধ। মারা গেছে ভেবে কান্নাকাটি শুরু করেছে সবাই।
আমি দ্রুত পালস (এমনকি ক্যারোটিড), শ্বাস প্রশ্বাস, বুকে কান লাগিয়ে (যেহেতু স্টেথো ছিল না) হার্ট সাউন্ডও পেলাম না। সাথে সাথেই কার্ডিয়াক মেসেজ দিলাম, মাউথ টু মাউথ ব্রিদিং একজনকে শিখিয়ে দিয়ে সেটা দিতে বললাম। ৫/৭ মিনিটের মধ্যে তার পালস, হার্ট সাউন্ড, শ্বাস ফিরে এল। জিহ্বা দেখাল, চোখও খুলল। বেঁচে গেল সে।
কি করবেন আপনি?
১। যদি বিদ্যুতের তারে লেগে থাকে তবে ভারী সেন্ডেল পায়ে শুকনা বাঁশ বা কাঠ দিয়ে সেটা সরিয়ে দিন। বিদ্যুতায়িত অবস্থায় সরাসরি তাকে ধরতে যাবেন না কখনোই। নইলে আপনিও বিপদে পড়বেন।
২। দ্রুত তাকে বালিশ ছাড়া, কাপড় খুলে (যথা সম্ভব) মাটিতে শুইয়ে দিন। এতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ মাটিতে চলে যাবে।
৩। মুখ, নাকে কোন ময়লা, থু থু আছে কিনা বা জিহ্বা উলটে গিয়েছে কিনা দেখে নিন। থাকলে হাতের কাছে যাই পান (কাপড়) দিয়ে পরিস্কার করে দিন, জিহ্বা উল্টে থাকলে মুখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে তা সোজা করে দিন।
এরপর দুই চোয়ালের মাঝে দুই দিকে চাপ দিয়ে মুখ খোলা অবস্থায় মুখ দিয়ে ফু দিতে থাকুন (আর্টিফিসিয়াল ব্রিদিং=মাউথ টু মাউথ)।
৪। একই সাথে বুকের ঠিক মাঝখানে একটু বায়ে (যেখানে হার্ট থাকে) হাতের তালুর গোড়ালি দিয়ে একটু ধাক্কা (ব্লো) দিন। এরপর ডান হাতের উপর বা হাত রেখে ১-২-৩…. ১-২-৩ এভাবে চাপ দিতে থাকুন। এটা মিনিটে ৭২ বারের মত করতে হয়। অর্থাৎ ঘড়ির কাটার টিক টিক এর চেয়ে একটু বেশি।
৫। ৩ ও ৪ পদ্ধতি ৫/৭ মিনিটের মত করে পালস, হার্ট সাউন্ড (যদি সম্ভব হয়), শ্বাস প্রশ্বাস দেখুন। যদি ফিরে আসে তবে বন্ধ করুন। আর ফিরে না এলে আবার ৩, ৪ রিপিট করুন।
৬। হাত, পা, শরীর হালকা মেসেজ করে দিতে পারেন।
৭। সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে “Hartsol Saline 1000 ml” ২৫/৩০ ফোটা প্রতি মিনিটে দিতে পারেন। খেতে পারলে পানি, খাবার স্যালাইন, দুধ, ডাবের পানি এসব দিন।
নিরাপদ থাকুন, সুস্থ্ থাকুন!!!
© Dr. Hriday Ranjan Roy