গত রবিবার আমার বিকাশ নম্বরে আমার বড় দুলাভাই রাজবাড়ি থেকে ০১৮৪২৫১৪৩৪৭ এই নম্বর থেকে তাঁর ছেলের জন্য ৮১৬০ টাকা পাঠান। যা আমার বিকাশ অ্যাকাউন্টে এখনো জমা আছে।
আজ আধঘন্টা আগে আমার মোবাইল নম্বরে অপরিচিত একটি নম্বর +৮৮০১৭৪৯২৯৩৩০৩ থেকে ফোন আসে। আমি ফোন রিসিভ করতেই আমাকে সালাম দিয়ে এক লোক আমার কাছে জানতে চাইলো আমার বিকাশ নম্বরে ৮১৬০ টাকা এসেছে কী না? আমি হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম। উনি জানালেন যে নম্বর থেকে এই টাকা এসেছে সেই বিকাশ এজেন্টের দোকানটি উনি চালান। কিন্তু উনি বিকাশ করার দিন দোকানে ছিলেন না, দোকানে ছিল তাঁর ছোট ভাই। সে টাকা পাঠাতে যেয়ে কিছু ভুল করেছে, তাই ফোন দিয়ে কনফার্ম হচ্ছে। আমি ওনার দায়িত্ববোধ দেখে খুবই মুগ্ধ। আমি কথার ফাঁকে ফাঁকে তাকে দু-তিনবার অলরেডি ধন্যবাদ দিয়েও ফালাইছি। সেও খুব গাম্ভীর্যের সাথে মহান আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া আদায় করলো, সততার সাথে ব্যবসা করতে পারছে বলে। তাকে আবারও ধন্যবাদ ও শুভকামনা জানিয়ে ফোন রাখতে যেতেই সে খুব দূঃখিত কন্ঠে বললো, ভাইয়া আপনার সাথে আরেকটা ছোট্ট ভুল হয়ে গেছে। সে কথাটা বলার জন্যই মূলতঃ এই ফোন। আমি যেহেতু তার আচরণে অতীব মুগ্ধ, তাই তিনি যাহাই বলেন আমি মুগ্ধ শ্রোতার মতো শুনি।
তিনি বললেন, চ্যাংড়া ছাওয়ালটা মানে তার ছোট ভাই একজনকে ২০,০০০ টাকা পাঠানোর কথা, ঐ টাকা ভুল করে ছাওয়ালটা আরেক নাম্বারে পাঠিয়ে দেছে। আরও খারাপ কথা হলো, ঐ টাকার জন্য কমপ্লেন করা হলে ঐ লোক( ভুল প্রাপক) এখন টাকার কথা স্বীকার করছে না। তাই তিনি থানায় জিডি করে বিকাশ হেড কোয়ার্টারে কমপ্লেন করেছেন। কিন্তু ভুলক্রমে আবারও তাঁর ছোট ভাই আমার নাম্বারটি বিকাশ অফিসে দেওয়ায়, বিকাশ অফিস আমার বিকাশ নম্বর বন্ধ করে দিছে। যার জন্য ঐ দোকানদার খুবই লজ্জিত, বিস্মিত, ব্যথিত। এহেন ঝামেলার জন্য তিনি আমার কাছে পৌনঃপুনিক ক্ষমা চাচ্ছেন।
এখন সত্যিই আমিও কিছুটা ভয় পেলাম, কারণ টাকাটা উঠিয়ে ভাগ্নেকে দেয়া হয়নি। দোকানদার আমার কাছে জানতে চাইলো আমি টাকা উঠিয়েছি কী না, আমার কাছে কতো টাকা ছিল? আমি না বলতেই সে খুবই লজ্জিত হলো, বললো এখন কোরবানির সময় আমার জন্য আপনার এই টাকাগুলো আটকিয়ে গেল।
আমি মনে একটু কষ্ট নিয়ে তাকে বললাম, এখন উপায়? সে খুবই দূঃখিত ভঙ্গিতে আমায় জানালো সে হেড অফিসে কথা বলেছে, আমার নম্বরটি ভুলক্রমে দেয়া হয়েছে ওটা যেন খুলে দেয়া হয়।
সে এরপরেই আমাকে জিজ্ঞেস করলো বিকাশ অফিস থেকে আমাকে কোনো ফোন করেছে কী না? আমি না করায়, সে বললো তাহলে করবে। আমি আবারও অফিসে আপনার জন্য সুপারিশ করবো, আপনাকে ফোন দিলে আপনি খুলে দিতে অনুরোধ করবেন।(এই পর্যায়ে আমি কিছুটা দ্বিধান্বিত হলাম) আর কাগজ-কলম নিয়ে একটা জিডি নম্বর লিখেন, আমি লিখলাম, জিডি নং ১৭৮০০। এরপরে সে আমার কাছে আবারও দূঃখ প্রকাশ করে, ক্ষমা চেয়ে, দোয়া চেয়ে বিদায় নিলো।
এর কিছুক্ষণ পরেই +৮৮০১৯০৮০৯৭৭২৮ এই নম্বর থেকে আমার কাছে ফোনে আসে। বলে যে সে বিকাশ থেকে ফোন করেছেন(এখন আমি উহাদেরকে পুরাই চিনিয়া ফেলিলাম, এরা বিকাশ টাউট)। আমি কিছু না বুঝতে দিয়ে শুনতে থাকলাম তেনার কথা। দুজনেই কথা বলছেন রাজবাড়ির ভাষায়। প্রথমজন একেবারেই রাজবাড়ির ভাষায় কথা বললেও এই বিকাশ অফিসের ভন্ডটায় একটু শুদ্ধ বলতে চায়, কিন্তু পারছে না। সে বললো, “স্যার দূঃখের সাথে জানাচ্ছি, আপনার বিকাশতো বন্ধ করে দিছে, এখন চালু ‘করতি’ চাইলে আমি যা বলিবো তা তা ‘করতি’ হইবে”। আমি বললাম কী করতে হবে, তখন সে আমায় বললো যে আরেকটা নম্বর দিতে, ঐ নম্বরে সে কথা বলে যা যা করতে বলে করতে হবে আমার বিকাশ নম্বর ওয়ালা মোবাইলে। আমি আরেকটি নম্বরের জন্য ৩-৪ মিনিট নষ্ট করেছি কিন্তু তিনি বিরক্ত হননি। সে যা বলছে আমি করছি, তবে খুবই ধীর গতিতে এবং ২/৩ বারের প্রচেষ্টায়। এর মাঝে আমি বললাম দেখুন আমি অফিসে আছিতো ব্যস্ত আছি, আমি আপনার সাথে পরে কথা বলি? এটা শুনে উনি ঈদের পরে দোকানদারকে সঙ্গে নিয়ে মগবাজার বিকাশ অফিসে আসতে বললেন। উনি বললেন তবে এখন করাটা আমার জন্য ভালো। বিকাশ এখন তাদের বন্ধ সব নম্বর খুলে দিচ্ছে ঈদের আগে বলে, পরে অনেক ঝামেলা হবে। তখন আমি এখনই করতে চাইলে উনি *২৪৭# নম্বরে ডায়াল করতে বলেন। আমি করছি বললে উনি ৮ চাপতে বলেন, এরপরে ১ চাপতে বলেন। কিন্তু এ পর্যায়ে এসে আমি মারাত্মক নেটওয়ার্ক বিভ্রাটের কথা বলি(যদিও আমি কিছুই চাপিনি)। উনি আমাকে অফিসের বাইরে যেয়ে কথা বলতে বলেন। এবং আমাকে আবারও নতুন করে এটা করতে বলেন এবার *২৪৭# থেকেই নেটওয়ার্ক সমস্যার কথা বার বার বলি। যা তেনাকে ক্রমান্বয়ে বিরক্ত করে তুলে।
এভাবে নেটওয়ার্ক সমস্যার ৪-৫ মিনিট সহ মোট ১৭ মিনিট কেটে যাওয়ায় সে আমাকেই সন্দেহ করা শুরু করলো। এতক্ষণ আমাকে শুধু স্যার স্যার করছিলো।
তেনার সন্দেহ পোক্ত হওয়ায় আমাকে গালি দিয়ে কইলো, ট্র্যাকিং কইরা তুই আমার হ্যা** করবি, শালা ****।
এরপর থেকে ঐ দুটো নম্বর আমি বন্ধ পাচ্ছি। আমি এ কথোপকথনের সবটা তুলে দিয়েছি এজন্য যে, এদের মিষ্টি ভাষায় আমরা যাতে বিভ্রান্ত না হই। তেনারা প্রতারণার পন্থাও চেঞ্জ করে আপডেট ভার্সনে নিয়ে এসেছে। আমি এ ভার্সনটির কথা আগে জানতাম না, তাই প্রথম বিভ্রান্ত হয়েছিলাম।
এ লেখাটার উদ্দেশ্য সবাইকে সাবধান করা।
সবাই ভালো থাকুন।