আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে রিকন্ডিশন এবং ইউজড গাড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া অন্যের ব্যবহৃত গাড়ি অনেক সময় স্বল্পমূল্যে কেনা যায়। আপনি যদি ব্যবহৃত গাড়ি কিনতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে জেনে নিন Used গাড়ি কেনার আগে জেনে নিন কি কি যাচাই করা দরকার।
✅ প্রথমেই গাড়ির বনেট তুলে চ্যাসিস মার খাওয়া কিনা সেটা দেখবেন। চেসিস হল গাড়ির মেরুদন্ড, আর মেরুদন্ড শক্ত না হলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না এটা আপনি নিজেই জানেন। তাই আগে দেখে নিন চেসিস মাইর খাওয়া আছে কিনা! যদি চেসিস খুব বেশি আঘাত না লাগে তবে পরবর্তী স্তরগুলোতে যেতে পারেন। নয়তোবা এই গাড়ি কেনার ডিসিশন এখান থেকে বাদ দিন এবং আরেকটা খোঁজা শুরু করুন।
✅ তারপর চেসিস নাম্বার, ইঞ্জিন নাম্বার মিলিয়ে দেখুন কাগজের সাথে এক কিনা। এগুলো আপনি ফিটনেস পেপারে পাবেন, সেখান থেকে মিলিয়ে নিন।
- Advertisement -
✅ এরপর ইঞ্জিন স্টার্ট করার পর অয়েল গেজটি তুলুন, এক্সেলেরেটর প্যাডেলে চাপ দিন যদি সাদা ধোঁয়া বের হয় তাহলে ইঞ্জিন বদলাতে হবে এটা ধরে নিতে নিন অন্যথাইয় এটা ভালো ইঞ্জিন।
✅ ইঞ্জিন স্টার্ট করে স্টিয়ারিং সিটে বসুন এরপর হেড লাইট অন করুন। তারপর ব্যাক গিয়ারে দিন যদি ঝাঁকি দেয় তবে ধরে নিবেন গিয়ারবক্স খুব শীঘ্রই বদলাতে হবে অন্যথায় গিয়ারর্বক্স ভালো আছে। বাকি গিয়ার গুলো পরিবর্তন করে দেখুন, স্মুথলি শিফট হয় কিনা। যদি স্মর্টলি শিফট হয় তবে ভালো নতুবা ধরে নিন গিয়ার বক্স খুব শীঘ্রই বদলাতে হবে। অনেক সময় গিয়ার বক্স বস করলে প্রবলেম এর সমাধান হয়ে যায় কিন্তু সমাধান না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাই খরচটা হাতে ধরে নিবেন
✅ গাড়ির সামনে বা সামনে ডানে বামে মার খাওয়া কিনা তা বোঝার জন্য স্টিয়ারিং ফুল ডানে-বামে কাটুন এবং দেখুন ফেন্ডারের নিচে ঝালাই করা আছে কিনা। যদি ঝালাই থাকে তবে বুঝবেন মাইর খাওয়া।
✅ গাড়ির সামনে পিছে নাম্বার প্লেট একদম স্টেট আছে কিনা সেটা মিলিয়ে নেবেন মাইর খাওয়া হলে একদম বাজে অবস্থায় চলে যাবে নতুবা ঠিক থাকবে।
✅ পুরো গাড়ির অন্য কোথাও কোন মাইর আছে কিনা সেটা দেখেন। ভাড়ায় চালিত গাড়ি হলে অনেকাংশেই পিছনে মাইর খাওয়া থাকে দাম কম পেলে কিনতে পারেন অন্যথায় বাদ দিন।
✅ গাড়ির ইন্টেরিয়র দেখুন ভালো কন্ডিশনার খারাপ কন্ডিশন নিজেই বুঝতে পারবেন।
✅ ইঞ্জিন স্টার্ট করে এসি অন করে দেখুন আপনাকে পর্যাপ্ত ঠান্ডা করতে পারে কিনা। টোয়োটা সিডান কার গুলোতে এসি এসি মেরামত করতে ৩হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।
✅ ইঞ্জিন স্টার্ট করার পর সাইলেন্সার পাইপ দিয়ে দেখুন কোনরকম কালো অথবা সাদা ধোয়া অনবরত বের হয় কিনা। যদি হয় তাহলে ইঞ্জিনের কাজ করাতে হবে। যদি vvti ইঞ্জিন হয় তাহলে দাম বেশি না ৩০ থেকে ৩৫ হাজারে কমপ্লিট করতে পারবেন।
✅ টায়ার গুলো দেখুন নতুন আছে কিনা। মধ্যম মানের থাকলেও ভালো। তা না হলে আবার আনুমানিক ২০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
✅ সুযোগ পেলে গাড়ি সামনে ড্রাইভ করে দেখুন স্টিয়ারিং ডানে বামে মোড় নেওয়ার সময় বাজে আওয়াজ হয় কি না। যদি হয় তবে সিবি জয়েন্ট বদলাতে হবে। খরচ হবে আনুমানিক ৩০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা।
✅ গাড়ির মালিক আপনাকে সাথে সাথে মালিকানা বদলি করে দিবে কিনা সেটা নিশ্চিত করুন। অন্যথায় ঝামেলায় পড়তে পাড়েন।
✅ সম্ভব হলে পেপারস এর এক কপি brta তে চেক করুন। গাড়ির মালিক দেখে সন্দেহ হলে করতে পারেন। এবং কোন মামলা আছে কিনা তাও জেনে নিন অন্যথা কেনার পরে অহেতুক ঝামেলায় পড়তে পারেন।
✅ গাড়ির পেপারস কতদিন আপডেট আছে সেটাও দেখে নিন। চেষ্টা করবেন অন্তত ছয় মাস আপডেট থাকে এমন গাড়ি কিনতে।
✅ সুযোগ পেলে একটু ভাঙ্গা রাস্তায় চালিয়ে সাসপেনশন এর অবস্থা দেখে নিন। ভাঙ্গা রাস্তা চালানোর সময় যদি ঢকঢক আওয়াজ করে তাহলে বুঝবেন সাসপেনশনের কাজ করতে হবে।
✅ যদি উবারে চালান তাহলে ১ নম্বর পয়েন্ট কোন মেজর ইস্যু হবে না, দাম কম পেলে নিতে পারেন।
✅ গাড়িতে কোন রংয়ের কাজ আছে কিনা দেখে নিন। ব্যবহৃত গাড়ি হলে রংয়ের কাজ থাকবেই এটাই স্বাভাবিক। ব্যবসায় থেকে কিনেন তাহলে ব্যাপারটা অন্তত ভালো পাবেন।
✅ গাড়িতে সিএনজি করা থাকলে সিলিন্ডারের মেয়াদ কত দিন আছে সেটা দেখে নিন।
✅সিএনজি ভীতি পরিহার করুন। এতো দিন যা শুনে আসছেন তা ভুলে যান। একটা vvti ইঞ্জিনের মূল্য ৩০-৩৫ হাজার টাকা।তাই প্যারা নেওয়ার দরকার নাই।
সরাসরি মালিকের কাছ থেকে না কিনে একজন ব্যবসায়ী থেকে কিনুন তাতে আপনার 50000 টাকা বেশি খরচ হলেও ভালো জিনিস পাবেন কারণ ব্যবসায়ীরা মাইর খাওয়া গাড়ি কম কিনেন। এবং অন্তত অনেক বিষয় যেগুলো আপনার মাথায় যাবে না সে ব্যাপার গুলো ব্যবসায়ীর আপনাকে বুঝিয়ে দেখেয়ি দিতে পারবেন। পরবর্তীতে তাদেরকে আপনি ধরতে পারবেন।
সরাসরি মালিক হলে শুধু একটা কথা আপনাকে বলবে ভাই আপনি তো দেখেই কিনছেন যা ব্যবসায়ীরা বলতে পারেনা। কারণ ব্যবসা করে তার পেট চালাতে হবে এবং আপনার মত দশজন কাস্টমারকে খারাপ কি জিনিস দিলে তা ব্যবসার একসময় নষ্ট হয়ে যাবে।
নোট: মিস্ত্রি বা ডিগ্রি বিহীন লোক গাড়ি চেকিং এর জন্য নিয়ে যাওয়া পরিহার করুন। অধিকাংশ মিস্ত্রি লোক মালিকের সাথে একটা বনাবনি করে ফেলে এবং আপনার ঘাড়ে অনেক কিছু গুছিয়ে দিবেন আপনি টেরও পাবেন না।
কেনা হয়ে গেলে শখের গাড়ির যত্ন নিন।
