২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
সর্বশেষ সব

ডুয়েল কারেন্সি কার্ড কিভাবে নিতে হয় বিস্তারিত জেনে নিন।

Link Copied!

বর্তমান সময়ে ইকমার্সের গন্ডি শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। দেশে প্রতিনিয়ত আলি এক্সপ্রেস, এমাজনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মাধ্যম থেকে মানুষ কেনাকাটা করছে। তাছাড়া হাজার হাজার মানুষ ফেসবুক ভিত্তিক ইকমার্স ব্যবসার সাথে যুক্ত এবং এই করোনা মহামারীকালে এই সংখ্যাটি দিন দিন বেড়েই চলছে।

ফেসবুক ভিত্তিক ব্যবসাগুলোর জন্য পন্যের বিজ্ঞাপন বা বুস্টের বিকল্প নেই। কিন্তু এই বুস্ট করার জন্য ফেসবুককে ডলারের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হয়। আর এই পেমেন্টের জন্য অনেকেই বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে কিছু অতিরিক্ত টাকা চার্জ দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন। ৩য় পক্ষের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে গিয়ে পড়তে হয় নানা ধরনের বিড়ম্বনায়।

আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো Facebook পোস্ট, পেইজ বুস্ট এবং Pikaja, Ali-express, Amazon সহ সকল অনলাইন শপসহ বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে পেমেন্ট করার জন্য কিভাবে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড নিতে পারবেন।

অনলাইন পেমেন্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রাঞ্জেকশনের জন্য আমাদের অনেক সময় অনেক বিরম্বনায় পড়তে হয়। পিকাজা সহ বাংলাদেশি সব মার্কেটপ্লেসেই বিকাশ, নগদ ইত্যাদি উপায়ে পেমেন্ট করা যায়। কিন্তু সমস্যা হয় শুধুমাত্র ফেসবুক এবং ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংকের ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের মাধ্যমে বর্তমানে পেমেন্ট করা গেলেও এই কার্ডের প্রাপ্তির ব্যাপারটা একটু জটিল। ডুয়েল কারেন্সি কার্ডে যেহেতু ডলার এন্ডোর্স করে পেমেন্ট করতে হয় তাই এই কার্ড নিতে হলে আগে পাসপোর্ট করতে হয়।

ডুয়াল কারেন্সি কার্ড হচ্ছে এমন একটি কার্ড যা একই সাথে দুইটি কারেন্সি সমর্থন করে। যেমন টাকা এবং ডলার হিসাবে আলাদা আলাদা ভাবে আপনি দুই ধরনের মুদ্রা ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারবেন এই কার্ডের মাধ্যমে।

EBL Lifestyle ডুয়েল কারেন্সি কার্ডঃ 

আজকে Eastern Bank এর ডুয়েল কারেন্সি Lifestyle VISA Card প্রাপ্তির বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

পুর্বে EBL এর Aqua নামে একটি Master Card চালু ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেটি বন্ধ করে ভিসা কার্ড দেয়া হচ্ছে। আগে যারা একুয়া কার্ড নিয়েছিল সেটা মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া পর্যন্ত সেটা ব্যবহার করা যাবে। এরপর নতুন কার্ড নেয়ার সময় ভিসা ডুয়েল কারেন্সি কার্ড নিতে হবে। ইবিএল লাইফস্টাইল কার্ড মূলত একটি প্রিপেইড কার্ড।

এই ভিসা কার্ডটিতে ডুয়েল কারেন্সি একটিভেট করা যায় আর তাই দেশে-বিদেশে সকল প্রকার online বা offline payment এর ক্ষেত্রেই এটি ব্যাবহার করা যায়।
তাই যারা যারা কার্ডটি নিতে চাচ্ছেন তাদের জন্য খুব সাধারন কিছু নির্দেশনা বর্ণনা করছি-

যা যা প্রয়োজনঃ

১/ ভোটার আইডি কার্ড অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি

২/ বর্তমান ঠিকানার প্রমান স্বরূপ বাসার বিদ্যুৎবিলের ফটোকপি।

৩/ ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

৪/ আপনার পাসপোর্ট (ডলার এনডোর্সমেন্টের জন্য)

৫/ একাউন্ট + কার্ড ফি ৫০০+৫০০ টাকা+১৫%ভ্যাট টাকা= ১১৫০টাকা।

➤আগে মাস্টারকার্ডের ক্ষেত্রে একাউন্ট ছাড়া শুধু কার্ড দেয়া হতো তখন চার্জ ছিল ৫০০ টাকা+১৫% ভ্যাট। কিন্তু বর্তমানে ভিসা কার্ডের সাথে বাধ্যতামূলক একাউন্ট ফি নেয়া হচ্ছে।

➤ আগে কার্ডের জন্য বাৎসরিক কোনো চার্জ ছিলনা, কিন্তু এখন যেহেতু বাধ্যতামূলক একাউন্ট খুলতে হচ্ছে তাই প্রতি বছর সর্বনিম্ন একাউন্ট মেনটেইনেন্স ফি ২৩০ টাকা চার্জ দিতে হবে।

যেভাবে আবেদন ও কার্ডে রিচার্জ করবেনঃ

১/ প্রথমে আপনার নিকটস্থ Estern Bank Limited এর শাখায় গিয়ে কার্ড ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করুন। (যদিও বর্তমানে কার্ডের জন্য ebl এর অফিসিয়াল সাইট থেকে অনলাইনেও আবেদন করা যায়।) আপনি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড নিতে চান জানালে তারা আপনাকে বেশ কয়েকটি ফর্ম দিবে এবং সেগুলো পূরন করতে বলবে। অতঃপর আপনার ছবি, ভোটার আইডি কার্ড অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি সহ সবকিছু চেক করে আপনাকে ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে ১১৫০ টাকা জমা দিয়ে পুনরায় কার্ড ডিপার্টমেন্টে এসে সব কাগজগুলো জমা দিতে বলবে। তারপর তারা আপনাকে মেসেজ পাওয়া পর্যন্ত সময় অপেক্ষা করতে বলবে। সাধারণত ৩-৫ কার্যদিবসের মধ্যেই আপনাকে মেসেজে জানানো হবে কার্ডটি সংগ্রহ করার জন্য। যদিও আগে সাথে সাথেই কার্ড দিয়ে দেয়া হতো। যেহেতু পুরো প্রক্রিয়াটি একটু সময় সাপেক্ষ তাই পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়েই বা একটু সকাল সকাল ব্যাংকে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।

২/ অনেক সময় কাগজ-পত্র জমা দেওয়ার পর সেগুলোর verification এর জন্য প্রায় সপ্তাহ খানেক লেগে যেতে পারে। ভেরিফিকেশান হয়ে গেলে আপনি আপনার ফোনে সাধারনত মেসেজ পাবেন, যদি না পান তবে ১ সপ্তাহ পর ১৬২৩০ নম্বরে কাস্টোমার কেয়ারে যোগাযোগ করুন।

৩/ মেসেজ আসলে আপনার কার্ডটি সংগ্রহ করার জন্য আপনার পাসপোর্ট নিয়ে একটু সকাল সকাল ব্যাংকে চলে যান।

৪/ এবার বাংকে গিয়ে আবার কার্ড ডিপার্টমেন্টে যান এবং সেখান থেকে আপনার পাসপোর্টে এন্ডোর্স করিয়ে নিতে হবে। এন্ডোর্সমেন্টের লিমিট- সার্কে ৫,০০০ USD আর নন-সার্কে ৭,০০০ USD। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আপনাকে বিস্তারিত অবহিত করবেন।  আপনি আপনার প্রয়োজন মত এন্ডোর্স করিয়ে নিন। যদি আপনার ট্রাঞ্জেকশন খুব বেশি হয় তাহলে বিষয়টি এন্ডোর্স করার সময় সেখানে জানাবেন। যদি কম করান তবে সমস্যা নেই, পরে বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

৫/ ডুয়েল কারেন্সি কার্ডে ডিপোজিটের জন্য একটু বড় সাইজের আলাদা ফরম রয়েছে। নির্ধারিত স্থান হতে ফরম সঙগ্রহ করুন, না পেলে কারো সহযোগিতা নিন। কার্ডে ডলার রিচার্জের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডিপোজিট স্লিপের ডলার পার্টে টাকার পরিমান উল্লেখ করুন। টাকা জমা দেয়ার সময় আপনাকে জিজ্ঞেস করা হবে আপনি কি টাকা জমা করতে চান নাকি ডলার নিতে চান? আপনি যেটা চান তা বলবেন। প্রায় সাথে সাথে কার্ডে টাকা/ডলার ঢুকে যাবে। এবং এ সংক্রান্ত একটি SMS আপনার দেয়া মোবাইল নাম্বারে চলে আসবে। টাকার বিপরীতে আপনাকে কত ডলার দেয়া হয়েছে সেটা মেসেজে উল্লেখ থাকবে। ভুলবশত যদি টাকা জমা হয়ে যায় আপনি অফিসে কল দিয়ে সেটাকে ডলারে কনভার্ট করতে পারবেন।

স্বভাবতই ডলারের মূল্য একেক দিন একেক রকম থাকে। অর্থাৎ এটি অল্প পরিমানে উঠা নামা করে। কিছুদিন আগে আমি যখন রিচার্জ করলাম তখন ১ ডলার = ৮৩.৫৬ টাকা ছিলো)

এন্ডোর্স করার পর সেটি একটিভ হতে ২৪ঘন্টা সময় নিবে। তাই কার্ডে ডলার লোড দিলেও সেটি একটিভ হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবেনা।

পেমেন্ট এবং সিস্টেমঃ

প্রতিবার ট্রাঞ্জেকশনে আপনাকে SMS এর মাধ্যমে অবহিত করা হবে। আন্তর্জাতিক পেমেন্টে অতিরিক্ত ১৫% ভ্যাট প্রজোয্য হবে, যা পেমেন্টের সময় কার্ড থেকে কেটে নেয়া হবে। ফেসবুক ছাড়া অন্যান্য পেমেন্টে শুধু ১৫% অতিরিক্ত কাটবে।

ফেসবুক পেমেন্টের ক্ষেত্রে যদি আপনার BIN নাম্বার ফেসিবুকে এড করা না থাকে তাহলে ফেসবুকের মূল পেমেন্টের উপর ফেসবুক ১৫% এবং সরকারকে ১৫% অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার যদি ১০ডলার পেমেন্ট আসে তাহলে ১.৫০+১.৫=৩ ডলার অতিরিক্ত কাটবে। ১০০ডলারে মোট ৩০ ডলার অতিরিক্ত কাটবে।

কার্ডের ব্যালেন্স চেক করার জন্য প্লেস্টোর থেকে Ebl sky অ্যাপটি নামিয়ে সেটাতে একাউন্ট করে আপনার কার্ডটি এড করে নিন। অথবা ফেসবুক মেসেঞ্জারে ebl dia চ্যাটবট থেকে এবং অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে মেসেজ দিয়েও জেনে নিতে পারবেন। তাছাড়া 02-8332232, 16230 এই নাম্বারগুলোতে কল করে এবং ইমেইলেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা যাবে।

বিকল্পঃ

এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের ডুয়েল কারেন্সি কার্ড রয়েছে। যেমন-

ইসলামি ব্যাংকের- খিদমাহ কার্ড,

ব্যাংক এশিয়ার- স্বাধীন কার্ড,

সাউথইস্ট ব্যাংকের- ইএমভি ভিসা ডুয়েল কারেন্সি ডেবিট কার্ড

সংক্ষেপে ফেসবুক এড সিস্টেমঃ

ফেসবুকে সাধারনত পেইজের মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট, ভিডিও, লিংক বা লাইকের জন্য বুস্ট করা হয়। যে পেইজে বুস্ট করতে চান অবশ্যই সেটি আপনার অরিজিনাল ফেসবুক প্রোফাইলে এড করে নিবেন। কারন কোনো কারনে যদি সেই ফেইক প্রোফাইল ডিজএবলড হয় তখন আপনার পেইজও হাওয়া হয়ে যাবে।

তারপর আপনার মূল ফেসবুক প্রোফাইলে কার্ডটি এড করে নিবেন। এড দেয়ার জন্য প্লেস্টোরে ads manager অ্যাপ পাওয়া যাবে। সেটা চালু করে সেখানেও কার্ডটি একটিভ করে নিতে পারবেন। ফেসবুক এড একাউন্টে মূলত পেমেন্টের জন্য একটি লিমিট থাকে, সেই লিমিট পুর্ন হলে কার্ড থেকে অটোমেটিক টাকা কেটে নিবে। সাধারনত ২৫ ডলার পর্যন্ত লিমিট থাকে। তাছাড়া প্রতি মাসের ১০তারিখে ফেসবুক পেমেন্ট কাটে যে পরিমান ব্যয় করা হয়েছে। যদি ২,৫,১০,২০ ডলার হয় সেটা কাটবে। সর্বোচ্চ কোনো লিমিট নেই। যত ইচ্ছা এড দেয়া যাবে যদি কার্ডে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স থাকে। না হলে ২৫ ডলার হয়ে গেলে চালু এডগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। আবার কার্ডে ডিপোজিট করে পেমেন্ট করলে আবার সবকিছু একটিভ হবে।

-শাহ্‌ আলম জয়,

Admin: অল বাংলা ট্রিক্স

CEO: নাগরিক আইটি

আপনার যদি আরো কোনো তথ্য জানার থাকে তাহলে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি ভিজিট করুন এবং যেকোনো ভিডিওর নিচে কমেন্ট করুন। চ্যানেল লিংক:  ক্লিক করুন 
error: Content is protected !!